নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা’ পদ্ধতি বাতিল এবং বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট করার দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান নিয়ে এই পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানান। একই সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় তাঁরা দাবির সপক্ষে লেখা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা বিভাগ পরিবর্তন ইউনিটের দাবিতে আন্দোলন করছেন। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেই দাবি পূরণ না করে উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ‘গুচ্ছ পদ্ধতি’ চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে বঞ্চিত হবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ না পেলে এসব মেধাবী হতাশায় নিমজ্জিত হবেন। তাই তাঁরা এই পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানান। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মাইশা নিসাত বলেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দাবির সপক্ষে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। কিন্তু বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের অবস্থান কর্মসূচিস্থল থেকে উঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস বলেন, শিক্ষার্থীরা রোদে কষ্ট করুন, সেটা আমরা চাই না। বিশেষ করে, করোনা মহামারি থেকে তাঁরা যাতে সুরক্ষিত থাকতে পারেন সে জন্য আমরা তাঁদের বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়েছি। শিক্ষার্থীদের দেওয়া স্মারকলিপি বিবেচনা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে।’ গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ১৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বৈঠকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতিতে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। গুচ্ছ পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত মোট ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হয়েছে। শুধু বাছাই করা শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সুযোগ পাবেন: ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরে। তবে প্রাথমিক যোগ্যতা থাকলেও ভর্তি-ইচ্ছুক সব পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন না। আবেদনের পর বাছাই করা প্রার্থীরাই কেবল এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন বৈঠকে উপস্থিত গুচ্ছে থাকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, সভায় তিনটি বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথমত, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেবে, তারপর এই ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয়ত, ইতিমধ্যে ঘোষিত যোগ্যতা অনুযায়ী, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা আবেদন করবেন। এ জন্য কোনো টাকা লাগবে না। এরপর আবেদন করা প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই (স্ক্রিনিং) করে নির্ধারিত সংখ্যক প্রার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে। যাঁরা ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যোগ্য হবেন, সেটি তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর যোগ্য প্রার্থীরা ৫০০ টাকা ফি দিয়ে আবার আবেদন করবেন এবং তাঁরাই ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন। এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটা যাবে। যেভাবে হবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বরের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা হবে বহুনির্বাচনী প্রশ্নে (এমসিকিউ)। উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা (বাণিজ্য) বিভাগের জন্য আলাদা তিনটি পরীক্ষা হবে। বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আগের মতো আলাদা পরীক্ষা হবে না। অর্থাৎ একজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়েই যোগ্যতা অনুযায়ী ভর্তির সুযোগ পাবেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমেই নিজ বিভাগের পাশাপাশি অন্য বিভাগভুক্ত বিষয়েও ভর্তি হতে পারবেন। সেভাবে বিষয়ভিত্তিক আসন বরাদ্দ রাখা হবে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ২০১৯ ও ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। এর মধ্যে মানবিক বিভাগের পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৬ থাকতে হবে। বাণিজ্য বিভাগের জন্য মোট জিপিএ-৬ দশমিক ৫ এবং বিজ্ঞানে মোট জিপিএ-৭ থাকতে হবে। তবে এসএসসি ও এইচএসসি—কোনো পরীক্ষায় জিপিএ-৩-এর নিচে থাকলে আবেদন করা যাবে না। মানবিক বিভাগের পরীক্ষা হবে বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে। এর মধ্যে বাংলায় ৪০, ইংরেজিতে ৩৫ এবং আইসিটিতে ২৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে। ব্যবসায় শিক্ষায় (বাণিজ্য) পরীক্ষা হবে হিসাববিজ্ঞান (২৫ নম্বর), ব্যবসায় গঠন ও ব্যবস্থাপনা (২৫ নম্বর), ভাষা (বাংলায় ১৩ ও ইংরেজিতে ১২ নম্বর) ও আইসিটি (২৫ নম্বর) বিষয়ে। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ভাষা (বাংলায় ১০ ও ইংরেজিতে ১০ নম্বর), রসায়ন (২০ নম্বর), পদার্থ (২০ নম্বর) এবং আইসিটি, গণিত ও জীববিজ্ঞান বিষয়ের মধ্যে যেকোনো দুটি বিষয়ে (প্রতি বিষয়ের নম্বর ২০) পরীক্ষা দিতে হবে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পরীক্ষায় কেউ পাস বা ফেল করবেন না। প্রত্যেকেই পরীক্ষার ভিত্তিতে একটি স্কোর পাবেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের শর্তানুযায়ী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এবং ওই ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নেবে, সেটি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করবে।
Leave a Reply